বর্ষায় চলনবিলের নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যায় । শিশুরা স্কুলে যেতে পারে না। এ সমস্যা সমাধানে স্বপ্ন দেখতেন চলনবিলের সন্তান মো: রেজওয়ান। তার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি ১৯৯৮ সালে গড়ে তোলেন ‘সিধুলাই স্বনির্ভর সংস্থা। সে সংস্থার মাধ্যমে ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠা করেন নৌকায় স্কুল। তার স্কুলগুলো এখন শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে চলনবিলের বন্যা কবলিত শত শত শিশুদের মাঝে।
জানা যায়, দেশীয় প্রযুক্তিতে বিশেষভাবে ডিজাইনকৃত নৌকা যা বন্যা প্লাবিত এলাকার অল্প পানিতে স্বাভাবিকভাবে চলাচলের উপযোগী। নৌকা স্কুলে রয়েছে শিশুদের পাঠদান উপযোগী বই-খাতা, চক- পেন্সিল সহ সকল শিক্ষা উপকরণ। রয়েছে সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে আলো ও ফ্যানের ব্যবস্থা। এমন কি প্রজেক্টরের মাধ্যমে পাঠদানের ব্যবস্থা ছাড়াও রয়েছে শিশুদের আনন্দ বিনোদনের সকল উপকরণ।
সরেজমিনে চলনবিলের তাড়াশ, সিংড়া, স্বিধুলাই, চাটমহর, ভাঙ্গুরা, গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম, ফরিদপুর উপজেলায় দেখা গেছে, নৌকা স্কুলে শিশু থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত চলছে পাঠদান। নৌকা স্কুল শিশুদের বাড়ি ঘাটে ঘাটে গিয়ে তাদের নৌকায় তুলে নেয়। এরপর নৌকা স্কুলটি বিলের নিরিবিলি কোন এক স্থানে গিয়ে শুরু করে পাঠদান। এভাবে এক একটি নৌকা স্কুল সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত ৩টি পর্বে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
একটা নৌকা স্কুলে রয়েছে পৃথক তিন জন শিক্ষক। চলনবিলের সিংড়া উপজেলার স্বিধুলাই এলাকার নৌকা স্কুলের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র রিফাত হোসেনের বাবা রবিউল করিম জানান, বন্যায় রাস্তা-ঘাট ডুবে গেলে শিশুরা স্কুলে যেতে পারে না। এ সময় শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে নৌকা স্কুল।
এ ব্যাপারে ‘সিধুলাই স্বনির্ভর সংস্থার নৌকা স্কুলের প্রোগাম ম্যানেজার সুপ্রকাশ পাল বলেন, চলনবিলে শিশুদের শিক্ষার আলো ছড়াতে ২৩টি নৌকা স্কুল কাজ করে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে ২ হাজারের ও বেশি শিক্ষার্থী শিক্ষা গ্রহণ করছে।
সিংড়া প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মইনুল হাসান জানান, চলনবিলের বিভিন্ন স্থানে নৌকায় স্কুল গুলো সরকারের পাশাপাশি যে ভাবে শিশুদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে তা প্রশংসার দাবি রাখে।